Posts

Showing posts from April, 2023

ইসলামী সাহিত্যের নিদর্শন

Image
ইসলামী সাহিত্যের নিদর্শন ইসলামী দাওয়াত প্রথম দিন থেকেই সঠিক বিপ্লবের রূপে আত্মপ্রকাশ করে। চিন্তার মোড় ফিরিয়ে দেয়া, কথা ও কাজের ধারার পরিবর্তন করা এবং সমাজ কাঠামো বদলে দেয়াই হয় তার লক্ষ্য। সাহিত্যের যে ধারা জাহেলী যুগ থেকে চলে আসছিল ইসলাম এসে তার খোল নলচে পাল্টে দেয়। জাহেলী যুগের কবিদের সম্পর্কে কুরআনের সূরা আশ শূ’আরায় বলা হয়: ওয়াশ শু’আরাউ ইয়াত্তাবিউ হুমুল গবূন, আলাম তারা আন্নাহুম ফী কুল্লি ওয়াদিঁই ইয়াহীমূন, ওয়া আন্নাহুম ইয়াকূলূনা মা-লাইয়াফআলূন – “আর কবিরা! ওদের পেছনে তো চলে পথভ্রষ্ট যারা, দেখছোনা তারা মাথা খুঁড়ে ফেরে প্রতি ময়দানে আর বলে বেড়ায় যা করে না তাই।“ এভাবে জাহেলী যুগের সাহিত্য চিন্তার মূলধারাকে ইসলাম ভ্রষ্টতার আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপ করে। জাহেলী যুগের সাহিত্য চিন্তা কোন নির্দিষ্ট লক্ষ্যাভিসারী ছিল না। বিভ্রান্ত চিন্তার বিভিন্ন অলিতে গলিতে সে চিন্তা ছুটে বেড়াতো। চিন্তার স্থিরতার মাধ্যমে জীবনকে কোন এক লক্ষ্যবিন্দুতে পৌঁছিয়ে দেয়ার দায়িত্ব সেখানে নেয়া হয়নি। তাই জাহেলী যুগের কবিদের কথা ও কাজের কোন মিল ছিল না। বড় বড় বুলি আওড়ানোই ছিল তাদের পেশা। সেই অনুযায়ী কাজ করা বা নিজেদের দাবী অনুযায়ী ...

হযরত আলী (রা) এর শাহাদাত

 হযরত আলী (রা) এর শাহাদাত জঙ্গে জামালের পর ইসলামী খেলাফতের লড়াই দুই ব্যক্তির মধ্যে আসিয়া সীমাবদ্ধ হয়। একজন হইতেছেন হযরত আলী ইবনে আবু তালেব এবং অন্যজন হইতেছেন আমির মোয়াবিয়া ইবনে আবু ছুফিয়ান (রা)। এঁদের মধ্যে তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ছিলেন আমর ইবনুল আস (রা)। রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও কূটনীতিতে ইনি বিশেষ খ্যাতি অর্জন করিয়াছিলেন। সিফফীনের যুদ্ধ মুসলমানদের মধ্যে খারেজী নামক আর একটি নূতন রাজনৈতিক দল সৃষ্টি করিয়া দিয়াছিল। দলটি সম্পূর্ণরূপে রাজনৈতিক উদ্দেশে গঠিত হইলেও এর সঙ্গে ধর্ম-বিশ্বাসকে জড়িত করা হইয়াছিল। ইহাদের রাজনৈতিক বিশ্বাস ছিলঃ ان الحكم الا الله -- “রাষ্ট্রের সর্বময় কর্তৃত্ব একমাত্র আল্লাহর।” অর্থাৎ, রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব কোন ব্যক্তিকেন্দ্রিক হওয়া বাঞ্ছনীয় নয়। বর্তমান যুগের দৃষ্টিভঙ্গিতে উহাদিগকে নৈরাজ্যবাদী বলা যাইতে পারে। এই জন্য উহারা কুফা ও দামেশকের উভয় রাষ্ট্রশক্তিরই ঘোর বিরোধী ছিল। মক্কায় বসিয়া খারেজীগণ ইসলামের ইতিহাস সম্পূর্ণরূপে পরিবর্তিত করিয়া দেওয়ার ষড়যন্ত্র করিল। এই জন্য তিন ব্যক্তি তিনটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব গ্রহণ করে। আমর ইবনে বকর তামিমী শপথ করিল, “আমি মিসরের শাসনকর্তা আমর ই...

হযরত ওস্‌মানের শাহাদাত

 হযরত ওস্‌মানের শাহাদাত ইসলামের ইতিহাসে অন্তর্বিরোধের একটি কলঙ্কজনক রেখা ফুটিয়া রহিয়াছে। এই রেখার সূত্রপাত সর্বপ্রথম হযরত ওসমানের রক্ত দ্বারা ঘটিয়াছে এবং এর ফলে ইসলামের পূর্ণ মর্যাদা চিরকালের জন্য সমাহিত হইয়া যায়। হযরত ওসমানের শাহাদাতের মূল ভিত্তি হইতেছে, কোরায়শ গোত্রের বনী হাশেম ও বনী উমাইয়ার বংশগত বিদ্বেষ। এই বিদ্বেষের পূর্ণ ব্যাখ্যা করা ছাড়া তাঁহার শাহাদাতের উপর পূর্ণ আলোকপাত সম্ভব নহে। এই জন্য সর্বপ্রথম আমরা এই বিষয়টি ব্যাখ্যা করিতে চেষ্টা করিব। হযরত ইসমাঈল (আ) –এর বংশধর হযরত রসূলে খোদা সাল্লাল্লাহু আালাইহে ওয়া সাল্লামের প্রপিতামহ আবদুল মানাফের ব্যক্তিত্ব ইতিহাসে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। ইহার চারি পুত্র ছিলেন : নওফাল, মোত্তালেব, হাশেম ও আবদুশ শামস। বনী হাশেম ও বনী উমাইয়ার পারস্পরিক বিদ্বেষের অর্থ হইতেছে হাশেম ও আবদুশ শামসের সন্তানদের পারস্পরিক অনৈক্য। হাশেম যদিও আবদুশ্ শামসের ছোট ছিলেন, তথাপি যোগ্যতা ও দানশীলতার জন্য গোত্রে নেতৃত্ব লাভ করিতে সমর্থ হইয়াছিলেন। ইনি রোম সম্রাট ও হাবশার নরপতি নাজ্জাশীর সহিত বাণিজ্য সম্পর্ক স্থাপন করিয়াছিলেন। অতঃপর তিনি কাবা গৃহের সব দায়িত্বও প্রাপ্ত হন। ...

হযরত ওমরের শাহাদাত

 হযরত ওমরের শাহাদাত রসূলে খোদার (সা) শেষ বিদায়ের পর ইসলাম ও মুসলিম জাতির রক্ষণাবেক্ষণের কাজ ছিল এক পর্বতপ্রমাণ দায়িত্ব। এ সহ্যাতীত বোঝা ইসলামের দুই জন নিষ্ঠাবান সন্তান মিলিতভাবে গ্রহণ করিয়াছিলেন। ইহাদের প্রথম ব্যক্তি হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রা) ও দ্বিতীয় ব্যক্তি ছিলেন হযরত ওমর ফারুক (রা)। হযরত সিদ্দিক (রা) একাধারে রসূলে খোদার (সা) বিচ্ছেদ-ব্যথায় তিলে তিলে নিঃশেষিত হইয়া আসিতেছিলেন, অপরদিকে ইসলাম ও মুসলিম জাতির দায়িত্বের গুরুভার তাঁহার মস্তক বিগলিত করিয়া দিতেছিল। ইহার ফল হইল, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামের পর তিনি মাত্র দুই বৎসরকাল জীবিত ছিলেন। তাহার পর এই দায়িত্বের বোঝা সম্পূর্ণরূপে হযরত ওমরের কাঁধে আসিয়া পতিত হয়। হযরত ওমর ফারুক (রা) কেমন প্রাণপণ সাধনা করিয়া খেলাফতের দায়িত্বভার পালন করিয়াছিলেন নিম্নের কয়েকটি ঘটনা হইতে তাহার অনুমান করা যাইবে। হরমুজান ছিলেন বিখ্যাত সেনাপতি। পারস্য সম্রাট ইয়াজদেগারদ তাঁহাকে আহওয়াজ ও ইরান প্রদেশের শাসনকর্তা নিযুক্ত করিয়া মুসলমানদের প্রতিরোধ করার জন্য প্রেরণ করেন। যুদ্ধ বাধিলে পর হরমুজান এই শর্তে অস্ত্র ত্যাগ করিতে সম্মত হইলেন, তাহাকে ছহিছালা...

হযরত আবু বকর সিদ্দিকের ইন্তেকাল

 হযরত আবু বকর সিদ্দিকের ইন্তেকাল হযরত আবু বরক সিদ্দিক (রা) রসূলে খোদার (সা) ইন্তেকালের পর মাত্র দুই বৎসর তিন মাস জীবিত ছিলেন। হযরত ইবনে ওমর (রা) বলেন, “রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামের বিরহ-ব্যথা তিনি সহ্য করিতে পারেন নাই। দিন দিনই কৃশ-দুর্বল হইয়া যাইতেছিলেন। এইভাবেই তিনি দুনিয়া হইতে শেষ বিদায় গ্রহণ করেন।” রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামের ইন্তেকালের পর তিনিই সকলকে সান্ত্বনার বাণী শুনাইয়াছিলেন, কিন্তু তাঁহার নিজ অন্তরের দাহ একটুও শান্ত হয় নাই। একদিন বৃক্ষ শাখে একটি পাখীকে নাচিয়া বেড়াইতে দেখিয়া একটু উত্তপ্ত দীর্ঘ নিঃশ্বাস সহকারে বলিতে লাগিলেন, “হে পাখী, কত ভাগ্যবান তুমি। গাছের ফল খাও আর শীতল ছায়ায় আনন্দে কালাতিপাত কর। মৃত্যুর পরও তুমি এমন স্থানে যাইবে, যেখানে কোন প্রকার জবাবদিহির দায়িত্ব নাই। পরিতাপ! আবু বকরও যদি এমন ভাগ্যবান হইত!” কখনও কখনও বলিতেন “আফসোস! আমি যদি তৃণ হইতাম আর চতুষ্পদ জন্তু আমাকে খাইয়া ফেলিত।” এই সমস্ত দুঃখ ভারাক্রান্ত উক্তি হইতে অনুমান করা যায়, রসূলে খোদা সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামের চির-বিদায়ের পর হযরত আবু বকরের হৃদয়ের ব্যথা কতটুকু উৎকট...

নবী পরিবারের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি

নবী পরিবারের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি (১) হযরত খাদিজা (রা) হিজরতের আগে মক্কায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পরিবার ছিলো নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তাঁর স্ত্রী খাদিজা (রা.)-এর সমন্বয়ে গঠিত। এই বিয়ের সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বয়স ছিল পঁচিশ এবং বিবি খাদিজার বয়স ছিলো চল্লিশ বছর। হযরত খাদিজা (রা.) ছিলেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রথমা স্ত্রী। তাঁর জীবদ্দশায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অন্য কোন বিয়ে করেননি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সন্তানদের মধ্যে হযরত ইবরাহিম ছাড়া অন্য সবাই ছিলেন বিবি খাদিজার গর্ভজাত। পুত্রদের মধ্যে কেউ জীবিত ছিলেন না। তবে কন্যারা জীবিত ছিলেন। তাঁদের নাম হচ্ছে হযরত যয়নব, হযরত রোকাইয়া, হযরত উম্মে কুলসুম এবং হযরত ফাতেমা (রা.)। যয়নবের বিয়ে হিজরতের আগে তাঁর ফুফাত ভাই হযরত আবুল আস ইবনে রবির সাথে হয়েছিলো। রোকাইয়া এবং উম্মে কুলসুমের বিয়ে পর্যায়ক্রমে হযরত ওসমান (রা.) এর সাথে হয়েছিলো। হযরত ফাতেমা (রা.)-এর বিয়ে বদর ও ওহুদ যুদ্ধের মাঝামাঝি সময়ে হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.)-এর সাথে হয়। তাঁদের চার সন্তান হলেন হযরত হাসান, ...